উত্তরবঙ্গের জমজমাট পশুর হাট যাদুরাণী বাজার

news paper

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৬-৭-২০২৫ বিকাল ৫:৩০


ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার জাদুরানি বাজারে জমে উঠেছে  পশুর হাট।  হাটে দেখা যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক গরু ও ছাগলের সমাগম। সকাল থেকেই চারদিক থেকে দলে দলে লোকজন আসছেন হাটে। কেউ গরু ছাগল কিনতে আসছেন কেউবা বিক্রি করতে। পুরো বাজারে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। গরুর ডাক ছাগলের কিচিরমিচির মানুষের হাঁকডাক দরদাম সব মিলিয়ে জমজমাট দৃশ্য।বাজারে দেশীয় নানা জাতের গরু পাওয়া যাচ্ছে। কালো সাদা বাদামী ছোপ ছোপ রঙের গরু যেগুলো সকলেই কুরবানির জন্য উপযুক্ত এবং সুস্থ। পাশাপাশি আছে নানা আকারের ছাগল ছোট বড় সব ধরনের। অনেক বিক্রেতাই গরু সাজিয়ে এনেছেন গায়ে মালা রঙিন কাপড় এমনকি কিছু পশুর গায়ে চুন দিয়ে আকর্ষণীয় ডিজাইন করা হয়েছে। এসব দেখে বোঝা যায় তারা গরুর হাটিতে ক্রেতারা জানাচ্ছেন অন্যান্য হাটের তুলনায় জাদুরানি বাজারে পশুর দাম তুলনামূলক কম এবং অনেকটাই সাধ্যের মধ্যে। অনেকেই বলছেন তারা এখানে এসে ভালো গরু কম দামে পেয়েছেন। হাটে কথা হয় রহিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন আমি এক লাখ টাকায় খুব ভালো একটা গরু কিনেছি যেটা অন্য হাটে গেলে এক লাখ বিশ হাজার চাইলেও অবাক হতাম না।একইভাবে ছাগল কিনে খুশি দুলাল মিয়া  বলেন ছাগলের দাম অনেকটা আমার সাধ্যের মধ্যেই। আমি এই হাটে আসতেই চাই কারণ এখানকার দামের মধ্যে বিশ্বাস আছে।প্রতিবছরই ঈদুল আযহা কে ঘিরে প্রশাসনের তৎপরতা থাকে  চোখে পড়ার মতো। বাজারের একপাশে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রোডে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ সদস্যরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।এছাড়া পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রাণিসম্পদ অফিসের একটি অস্থায়ী চিকিৎসা বুথ বসানো হয়েছে। সেখানে গরু ছাগলের শরীর পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে তারা কুরবানির উপযোগী কি না অসুস্থ পশু শনাক্ত করে আলাদা রাখা হচ্ছে।এক পশু চিকিৎসক জানান বাজারে আসা অধিকাংশ গরু ছাগলের স্বাস্থ্য ভালো। তবে কিছু গরু হাটে আসার পথে দুর্বল হয়ে যায় তাদেরকে ইনজেকশন ও খাবার দিয়ে সুস্থ রাখা হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তি কাজ করছে কারণ তারা নিশ্চিত হচ্ছেন তারা সুস্থ পশুই কিনছেন।বাজারের বিভিন্ন জায়গায় চা দোকান পান দোকান ভাজা পোড়ার অস্থায়ী দোকানও বসেছে। অনেকেই গরু দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে এক কাপ চায়ে মুখ ভিজাচ্ছেন। কিছু দোকানে শিশুদের খেলনা মুখোশ বাঁশিও বিক্রি হচ্ছে। এক কথায় হাটটি এখন শুধুমাত্র কেনাবেচার জায়গা নয় বরং একটি উৎসবের মিলনমেলা।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা হাট ব্যবস্থাপনা তদারকি করছেন নিয়মিত। পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় রাখা হয়েছে কেরোসিন ও ব্লিচিং পানির ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট স্থানে পশুর মলমূত্র ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।বিক্রেতাদের মুখেও হাসি। তারা বলছেন এই হাটে পশু বিক্রি করতে পেরে তারা ভালো দাম পাচ্ছেন এবং ক্রেতারাও দাম নিয়ে তেমন অভিযোগ করছেন না। এতে করে দুই পক্ষই খুশি। অনেকেই বলছেন গত বছরের তুলনায় এবার পশুর সরবরাহ বেশি এবং বাজারের পরিবেশও অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত ও নিরাপদ।এই হাট এখন কেবল পশু কেনাবেচার কেন্দ্র নয় বরং একটি উৎসবের আবহে পরিণত হয়েছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই মুহূর্তের কেনাকাটা করতে ভিড় বেড়েছে বহুগুণ।অনেকেই বলছেন আজই কিনে ফেলছি কাল আর বাজারে ঠাঁই মিলবে নাএমন এক তাড়া আর চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পুরো হাটজুড়ে। এ যেন শুধু গরু ছাগলের বেচাকেনা নয় বরং ঈদের আনন্দেরই আরেক রূপ।এই চিত্র দেখলেই বোঝা যায় জমজমাট  পশুর হাট কেবল একটি লেনদেনের স্থান নয় এটি হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনের অংশ। জাদুরানি বাজার এখন শুধু একটি হাট নয় বরং একটি উৎসবমঞ্চ যেখানে গরু ছাগলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে মানুষের আশা বিশ্বাস ও ভালোবাসার গল্প।
 
রাণীশংকৈল উপজেলার হোয়াট ইজারাদার আবু তালেব জানান। আমরা যারা হার্ট ব্যবসা করি আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এইহাট ব্যবসার সাথে জড়িত। আগে ব্যবসা ছিল হার্ট ব্যবসা ছিল এখন আগের মতো হার্ট ব্যবসা নাই। যাদুরাণী হাটি আগে থেকেই জমজমাট ছিল এখনো জমজমাট রয়েছে। তবে হাতে কিছু সমস্যা রয়েছে যেই সমস্যাগুলো প্রশাসনের নজরদারিতে আসলে আটটি আরো জমজমাট লাগবে দূর দূরান্তের বিভিন্ন গরুর ব্যবসায়ীরা প্রতি হাটে এখানে আসেন।গরু ছাগলসহ অন্যান্য পণ্য তারা এখান থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায় ব্যবসা করেন। 
 
হাট ইজারাদার ওমর  ফারুক  বলেন, এর আগে এই হাটতে  পূর্বে  ইজারাদারগান এ বৃহত্তর হাটতে অনেক লস করেছেন। গরু হাটে সর্বনিম্ন  গরুর লেখায়  হওয়ার কারণে  এর আগে রোজাদারদের প্রচুর লস হয়েছে। এখন নতুন রেড হয়েছে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই গরুর হাটি  হরিপুর উপজেলার ২ নং আমগাঁ ইউনিয়নের অবস্থিত যাদুরানি গরুর হাট।  এই হাতটি এই উপজেলা সর্বোচ্চ বড় হাট ও ঠাকুরগাঁও জেলার একটি বড় হাট। এই হাটে বিভিন্ন জেলার মানুষ গরু ক্রয় করতে আসেন টাংগাইল, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, বগুড়া, সৈয়দপুর, নীলফামারী, বিরামপুর, দিনাজপুর, পার্বতীপুর, চুয়াডাঙ্গা রাজশাহী মাদারীপুর বাংলাদেশের  বিভিন্ন অঞ্চলের এবং বিভিন্ন জেলার  গরুর ব্যাপারীরা এখানে গরু ক্রয় করতে আসেন প্রতিহাটেই তারা ৩০০, হতে ৪০০ হতে -৫০০-হাজার পর্যন্ত গরু ক্রয় করে ট্রাকের মাধ্যমে  নিয়ে যায়।  প্রতি মঙ্গলবার বিশেষ করে  ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর এই সময়টা একটু বেশি কেনাবেচা হয় এবং জমজমাট হাতটি চলে।
 
 হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিকাশ চন্দ্র বর্মন জানান  যাদুরানী হাট যে সমস্যা রয়েছে জলাবদ্ধতা অন্যান্য যে সমস্যা রয়েছে আর সেগুলো নিরসন করা হবে। স্থানীয় চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলা হয়েছে যাদুরাণী হাট যেহেতু ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন একটি হাট বিশেষ করে গরু হাটটিতে জলবদ্ধতা রয়েছে হরিপুর  উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে সমস্যা নিরসন করা হবে।  অন্যান্য যে সমস্যা রয়েছে সে সমস্যাগুলো দেখা হবে। এই হাঁটি এটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী হাট যেহেতু এখানে দূর দূরান্তের মানুষে হাটে আসেন এই হার্টের সর্বোচ্চ যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো সমাধান করা হবে ।ড্রেহন ব্যবস্থা সহ মাটি ভরাট কাদামাটি আশপাশের রাস্তাঘাট সহ  সমস্যা  নিরসন করা হবে। 
 
হরিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ, মোহাম্মদ জাকারিয়া মন্ডল জানান, হরিপুর থানাধীন জাদুরানিয়া হাট  একটি ঐতিহ্যবাহী হাট এই হাটে বিভিন্ন জেলার গরুর ব্যাপারীর আসেন বিশেষ করে ঈদুল আযহার সময় দূর দূরান্তের বিভিন্ন জেলার ব্যাপারীরা এসে গরু ক্রয় করে নিয়ে যান আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সহযোগিতা করি আমাদের একটি টিম হরিপুর থানার পক্ষ থেকে এখানে আইনগত সেবা প্রদান করে থাকেন জাদুরানি হাটটি একটি ঐতিহ্যবাহী হাট এবং অনেক পুরাতন হাত। হরিপুর থানাধীন  ২ নং আমগাঁ ইউনিয়নের পুরনো ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন যাদুরানী গরুর হাট হাটি প্রতি মঙ্গলবার জমজমাট বিশেষ করে গরু ছাগল এবং অন্যান্য যা সামগ্রী আছে এ হাতে কিন্তু কেনাবেচা ভালোই হয়।

আরও পড়ুন